মাধবপুর, (হবিগঞ্জ) ৯ ডিসেম্বর : মাধবপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান চাষ করে ব্যাপক লোকসানের মুখে পড়েছেন শাহজাহানপুর, জগদীশপুর, নোয়াপাড়া ও বহরা ইউনিয়নের শত শত কৃষক। বীজ সংকট, বাজারজাত নিম্নমানের বীজ, অঙ্কুরোদগমের হার কমে যাওয়া এবং জমিতে দুর্বল চারা গজানোর কারণে এ বছর ফলন আশঙ্কাজনকভাবে কমেছে। এতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলেও লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকেরও কম ধান ঘরে তুলতে পেরেছেন কৃষকেরা। ফলে তারা চরম হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন এবং আগামী মৌসুমে ধান চাষ নিয়েও অনিশ্চয়তায় ভুগছেন।
শাহজাহানপুর ইউনিয়নের কৃষক সালাউদ্দিন জানান, চলতি মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে আমন আবাদ করতে তার ব্যয় হয়েছে প্রায় ২০ হাজার টাকা। অথচ ধান কর্তনের পর সব মিলিয়ে পেয়েছেন মাত্র ১২ মণ ধান। তিনি বলেন, “আমাদের মতো প্রান্তিক কৃষকের জন্য এটি মারাত্মক ক্ষতি। এত পরিশ্রম করে যদি লোকসানই গুনতে হয়, তাহলে চাষ করব কেন?”
জগদীশপুর ইউনিয়নের কৃষক হারুন মিয়া বলেন, বাজার থেকে কেনা বীজের বেশিরভাগই ছিল নিম্নমানের। বীজতলায় চারা ছিল দুর্বল এবং মাঠে রোপণের পর অনেক জায়গায় শীষ ধরেনি। তিনি আরও বলেন, “গত বছর আমার ৪ বিঘা জমিতে ১৮ মণ ধান পেয়েছিলাম। এবার সব মিলিয়ে মাত্র ৮–৯ মণ পেয়েছি। এতে শ্রমিকের খরচই তুলতে পারিনি।”
নোয়াপাড়া ইউনিয়নের কৃষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “এখন বাজারে কোনটি মানসম্মত বীজ আর কোনটি নকল—তা বোঝা কঠিন হয়ে পড়েছে। অনেক সময় কম দামের লোভে বীজ কিনে আমরা বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়ছি। এ অবস্থা চলতে থাকলে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহ হারাবে—এটা এখন স্পষ্ট।”
বহরা ইউনিয়নের কৃষক আনোয়ার বলেন, “এই বছর ধানের শীষ ঠিকমতো আসেইনি। জমির সার, পানি, সবকিছুর ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু ফলন এত কম যে খরচ উঠে না। কৃষির এ অবস্থায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেছে।”
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, অনেক ক্ষেত্রে ধানের গাছ লম্বা হলেও শীষে দানা হয়নি। কোথাও রোগবালাইয়ের আক্রমণ, আবার কোথাও গাছ বিবর্ণ হয়ে শুকিয়ে যেতে দেখা গেছে। সব মিলিয়ে এবছর আমন ধানের উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে। এতে কৃষকদের মধ্যে হতাশা ও উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে।
শাহজাহানপুর, জগদীশপুর, নোয়াপাড়া ও বহরা ইউনিয়নের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বীজ বাজারে কার্যকর তদারকির অভাবে একটি চক্র নিম্নমানের ও ভেজাল বীজ সরবরাহ করছে। এসব বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা দুর্বল, রোগবালাইয়ের ঝুঁকি বেশি এবং গাছের বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে না। ফলে এ বছর উৎপাদন অস্বাভাবিকভাবে কমে গেছে।
কৃষক আমজাদ মিয়া বলেন, “আগে আমরা সরকারি কিংবা পরিচিত উৎস থেকে বীজ নিতাম। এখন হাটে-মেলায় যে যেভাবে পারে বীজ বিক্রি করছে। কৃষকের ক্ষতি হলেও তাদের কিছুই যায়-আসে না।”
মাধবপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সজীব সরকার জানান, মাঠ পর্যায়ের প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে—ফলন কম হওয়ার প্রধান কারণ নিম্নমানের বীজ ব্যবহার। তিনি বলেন, “অনেক কৃষক অজানা উৎস থেকে কেনা বীজ ব্যবহার করায় ফলন কমে গেছে। এসব বীজের মান যাচাই করা হয় না, ফলে চারা দুর্বল হয় এবং শীষ ধরা কমে যায়।”
তিনি আরও বলেন, “আমরা কৃষকদের বারবার বলেছি নিবন্ধিত ডিলার বা সরকারি বীজ কেন্দ্র ছাড়া অন্য কোনো উৎস থেকে বীজ না কেনার জন্য। আগামী মৌসুমে উন্নতমানের বীজ নিশ্চিত করতে উপজেলা কৃষি অফিস বিশেষ সচেতনতা কার্যক্রম চালাবে। পাশাপাশি ভেজাল বীজের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি করা হবে।”
নিউজটি আপডেট করেছেন : Suprobhat Michigan

মাধবপুর, (হবিগঞ্জ) প্রতিনিধি :